১৩ নভেম্বর, ২০২১ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ
সম্ভাবনার নতুন দুয়ার জ্বালানিতে
আমদানি নির্ভর জ্বালানি ডিজেল, পেট্রোল কিংবা অকটেন নয়- দেশে তৈরি হাইড্রোজেন ফুয়েল দিয়েই চলবে গাড়ি। নবায়নযোগ্য এই জ্বালানি উৎপাদনে ইতোমধ্যে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। সংস্থাটি বলছে- সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালেই দেশে সীমিত পরিসরে হাইড্রোজেন ফুয়েল দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব হবে।
গাড়িতে হাইড্রোজেন ফুয়েলের ব্যবহার শুরু হলে পরিবহনে জ্বালানি খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমবে। বাংলাদেশ জ্বালানিতে সক্ষমতা অর্জন করবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে এ জন্য বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হবে জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনসহ অনেক চ্যালেঞ্জ।
সংশ্লিষ্টরা জানান- দেশে হাইড্রোজেন জ্বালানি নিয়ে গবেষণা করতে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিএসআইআর। ‘হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন’ নামে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই এখন বর্জ্য দিয়ে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হচ্ছে। ২০২২ সালের জুন থেকে পানি দিয়ে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হবে।
নগরীর বায়েজিদ এলাকায় বিসিএসআইআর’র চট্টগ্রাম গবেষণাগারে স্থাপিত এই হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার থেকে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ২০ কেজি বর্জ্য দিয়ে দশমিক ৮৭ কেজি হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালেই পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে চায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি।
বিসিএসআইআর বলছে- তাদের তৈরি প্রতি কেজি হাইড্রোজেন ফুয়েলে ১৩১ কিলোমিটার গাড়ি চালানো যাবে। বিপরীতে ১ লিটার পেট্রোলে গাড়ি চলে মাত্র ১০-১৩ কিলোমিটার। বিসিএসআইআর’র উৎপাদিত হাইড্রোজেন ফুয়েল পরীক্ষার জন্য জাপান থেকে ‘টয়েটো মিরাই’ ব্রান্ডের একটি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। এখন এই গাড়ি দিয়েই চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
বিসিএসআইআর’র সিনিয়র প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আবদুস সালাম পূর্বকোণকে বলেন, এটা রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পরে এর আউটপুট সবাই এমনিই নিতে পারবে। প্রজেক্ট সফল করার জন্য আরও পথ চলতে হবে। তবে প্রাইমারি স্টেজে ২০২২ সালের পরে বাংলাদেশে এই টেকনোলজি আমরা এক্সেস করতে পারবো।
তিনি বলেন, গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য হাইড্রোজেন ৯৯.৯৯ পিউর হতে হয়। আমাদের প্লান্টে আমরা এটা উৎপাদন করতে পারবো। এতে ইউনিট প্রতি খরচ হবে ৫-৬ ডলার। বিশ্ববাজারে যা ৮ ডলার। হাইড্রোজেন দিয়ে গাড়ি চালালে প্রতি কিলোমিটারে জ্বালানি খরচ পড়বে ৭ টাকা। সেই জায়গায় ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলে লাগবে ৮ টাকার বেশি।
ডিজেল, অকটেন বা পেট্রোল ব্যবহার করলে কার্বন নিঃসরণ হয়। পরিবেশ দূষণ হয়। মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয় এটি রেমিডি করতে। ২৫ লাখ মানুষ মারা যায় পরিবেশ দূষণের কারণে। ডিজেল অকটেন বা পেট্রোলের খরচের সঙ্গে এসব যুক্ত করলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে ১৫ টাকার উপরে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, আমাদের দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ভোক্তা পর্যায়ে নিতে পাম্প স্টেশন আছে। এখন হাইড্রোজেন জ্বালানিও ভোক্তা পর্যায়ে নিতে এরকম স্টেশন স্থাপনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আমরা গবেষণা করছি। এই গবেষণাকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। জ্বালানিতে সক্ষমতা অর্জনের একমাত্র বিকল্প হচ্ছে হাইড্রোজেন। কারণ আমাদের পানি বাইরে থেকে আনতে হবে না।